আফ্রিকার ছোট্ট দেশ ইসোয়াতিনি। আয়তনে ক্ষুদ্র, অর্থনীতিতে দুর্বল—কিন্তু এই দেশটির রাজা তৃতীয় এমসোয়াতির জীবনযাত্রা যেন কোনো হলিউড সিনেমাকেও হার মানায়। গরিব দেশের রাজা হলেও তাঁর ব্যক্তিগত বিলাসে নেই কোনো খামতি— ৩০ রানি, ৩৫ সন্তান, শতাধিক গৃহপরিচারক, রোলস রয়েসের বহর আর নিজস্ব ব্যক্তিগত জেটবিমান—সবই আছে এই এক ব্যক্তির দখলে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এমসোয়াতির একটি ভিডিও। তাতে দেখা যায়, তিনি চিতাবাঘের ছাপওয়ালা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে আবু ধাবি বিমানবন্দরে নেমেছেন নিজের জেটবিমানে করে। তাঁর সঙ্গে রাজপরিবারের সদস্য এবং প্রায় ১০০ জন পরিচারকও ছিলেন। রাজার আগমন ঘিরে বিমানবন্দরে এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় যে, নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে তিনটি টার্মিনাল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়।
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, রাজার এই সফর ছিল অর্থনৈতিক বৈঠকের জন্য। কিন্তু আলোচনার চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে তাঁর রাজকীয় বিলাসিতা। বলা হচ্ছে, কয়েকশ’ কোটি টাকা খরচ করে তিনি স্ত্রীদের জন্য রোলস রয়েস গাড়ি কিনে দিয়েছেন। বিদেশ সফরে ব্যক্তিগত বিমান ছাড়া চলেন না এই রাজা।
ইসোয়াতিনির নাগরিকরা যেখানে দারিদ্র্য ও বেকারত্বে জর্জরিত, সেখানেই রাজা এমসোয়াতির ব্যক্তিগত সম্পদ ছাড়িয়েছে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার। রাজা নিজেই দেশটির নির্মাণ, কৃষি, টেলিযোগাযোগ ও পর্যটন খাতের একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসোয়াতিনির ৬০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, আর বেকারত্বের হার ছাড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে।
তবু রাজা রয়েছেন রাজকীয় নিয়মে—প্রতি বছরই তিনি নতুন এক রানি বিয়ে করেন। দেশটির ঐতিহ্যবাহী “রিড ড্যান্স” উৎসবে হাজারো তরুণী অংশ নেন, আর সেখান থেকেই রাজা নির্বাচন করেন পরবর্তী রানি। বর্তমানে তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ৩০, তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে সক্রিয়ভাবে ১৫ জন রানির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছেন তিনি। সন্তান সংখ্যা ৩৫-এর বেশি।
রাজার বাবা, প্রয়াত দ্বিতীয় সোবুজা, ছিলেন আরও বেশি কুখ্যাত বিলাসিতার জন্য। তাঁর স্ত্রী ছিলেন অন্তত ৭০ জন, সন্তান ২০০ জনেরও বেশি। বলা হয়ে থাকে, রাজপরিবারের সদস্যদের সংখ্যা একসময় পুরো একটি ছোট শহরের সমান হয়ে গিয়েছিল।
রাজা এমসোয়াতির এই অপব্যয় ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই লিখেছেন, “যখন রাজা ব্যক্তিগত জেটে ভ্রমণ করেন, তখন তাঁর দেশের জনগণ অনাহারে দিন কাটায়।” কেউ কেউ আরও লিখেছেন, “যে দেশে অনেক জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, সেই দেশের রাজা কোটি কোটি টাকার রোলস রয়েসে চড়েন!”
দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নাজুক। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, শিক্ষাখাতে তহবিল সংকট, আর এইচআইভি আক্রান্তের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ— প্রায় ২৭ শতাংশ নাগরিক এই ভাইরাসে আক্রান্ত। সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা সীমিত, রাজতন্ত্রের সমালোচনা করলে শাস্তির ঝুঁকি রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজা দেশটির নাম পরিবর্তন করে ‘সোয়াজিল্যান্ড’ থেকে রাখেন ‘ইসোয়াতিনি’—যার অর্থ “সোয়াজিদের ভূমি।”
গরিব দেশের বিলাসী রাজা তৃতীয় এমসোয়াতির জীবন যেন বৈষম্য আর প্রাচুর্যের এক চূড়ান্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে।
									ডেইলি কলমকথার সকল নিউজ সবার আগে পেতে গুগল নিউজ ফিড ফলো করুন
                        
                        
                    
                    
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
													
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।